কেউ কেউ বলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা একটি ‘মিথ’। একটি বিশ্বাস। একটি বুকের মধ্যে পুষে রাখা অস্তিত্ব। কেউ কেউ তার খেলোয়াড়ি জীবনকে পাশে সরিয়ে শুধুই অনুসরণ করেন তার ব্যক্তি জীবন। যেখানে তিনি একজন দায়িত্ববান ছেলে, একজন দায়িত্ববান স্বামী, একজন অসাধারণ বাবা, একজন ছায়া হয়ে থাকা বন্ধু বা দলের সকলের কাছে বড় ভাই।
তিনি ওড়েন মুক্ত পাখির মতো
কিন্তু তিনি নিজে একজন পুরোদস্তুর কৌশিক। ১৯৮৩ সালের পাঁচ অক্টোবর নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে জন্ম নেয়া একটি দুরন্ত ছেলে।
যিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন নড়াইলের প্রতিটি অলিগলি। সাতার কেটেছেন তার প্রিয় চিত্রা নদীতে। এই কৌশিক বড় হয়েছেন নড়াইলের আলো বাতাসে।
এই কৌশিকই একদিন বল হাতে দৌড় শুরু করলেন নড়াইল থেকেই। পৌঁছে গেলেন জাতীয় দলে। ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন সবার প্রিয় মাশরাফি বিন মর্তুজা। হাজারো ঝড়ঝাপটা পার করে হয়ে উঠলেন ‘দ্য ক্যাপ্টেন অব বাংলাদেশ’।
![]() |
| নড়াইল এক্সপ্রেস |
বাবা গোলাম মুর্তজা জানান, পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন মাশরাফি। তার এসএসসি-এইচএসসির ফলও ভালো ছিল। এইচএসসি পাশ করার পর দর্শন শাস্ত্রে অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ততদিনে মাশরাফি পুরোদস্তুর ক্রিকেটার। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ। নিজের সেই ভালোবাসার খেলাকে সময় দিতে গিয়ে পড়াশোনাটা আর শেষ করা হয়নি মাশরাফির।
তার বাবা গোলাম মর্তুজা ছিলেন অ্যাথলেট। ক্রিকেট মোটেই ভালো লাগত না তার। কলেজ জীবনে হোস্টেলে তার রুমমেটরা ক্রিকেট খেলতেন। ক্রিকেটের বল-ব্যাট বাক্সে ভরে রাখতেন তারা। আর গোলাম মর্তুজা দুষ্টুমি করে সেই বাক্স মাঝেমধ্যেই রুমের বাইরে ফেলে দিতেন! সেই ক্রিকেট-বিদ্বেষী গোলাম মুর্তজার ছেলে মাশরাফির ক্রিকেটর সঙ্গে সখ্যতা কী করে হলো?
![]() |
| ব্যাটসম্যানদের কাছে মাশরাফি মানেই ত্রাস |
উইকেটরক্ষকের হাতে গ্লাভস থাকে। মাশরাফির তো আর গ্লাভস ছিল না। দু’হাতে দুটি চপ্পল নিয়ে উইকেটরক্ষকের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন তিনি। বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে পারতেন না। বড়রা তাকে সরিয়ে দিত, আর মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতেন তিনি।
যার ক্রিকেট নিয়ে এত আগ্রহ, তাকে কি আর আটকে রাখা যায়? কোনো বাধাই মাশরাফিকে আটকে রাখতে পারেনি। স্কুলের ক্রিকেট, নড়াইলের ক্রিকেট ঘুরে তিনি পৌঁছে যান বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলে। ততদিনে মাশরাফি আর উইকেটরক্ষক নন, হয়ে গেছেন পেস বোলার।
ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ভালো বল করেন তিনি। এরপর প্রথম সফরে যান নিউ জিল্যান্ডে। তরুণ মাশরাফি সেখানে গতির ঝড় তোলেন। এরপরই তার নাম হয়ে যায় ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
বাবা গোলাম মুর্তজার কাছে ক্রিকেটার মাশরাফি নন, মানুষ মাশরাফিই আগে জায়গা পায়। বাবার কাছে তার কৌশিক সাদা মনের আমুদে এক ছেলে।
অসংখ্য বাধা পার হয়ে আসা সেই মাশরাফিকে আদর্শ মেনেই বেড়ে উঠছেন অনেক তরুণ। তবে পুরো বাংলাদেশের কাছে তিনি মাশরাফি হলেও পরিবারের কাছে তিনি সবার প্রিয় কৌশিক। কিন্তু কেন তার নাম কৌশিক? এর পেছনেও আছে এক মজার গল্প।
সে সময়ে কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা কৌশিক চ্যাটার্জি। টেলিভিশনে তাকে দেখে দেখে তার ভক্ত হয়ে যান মাশরাফির মা হামিদা মুর্তজা। আর তাই তো প্রিয় অভিনেতার নামেই ছেলের ডাকনাম রাখেন ‘কৌশিক'।
![]() |
| বরাবরই সাধারন থাকতে পছন্দ করেন ম্যাশ |
এতটা চটপটে হয়েও ইনজুরির সঙ্গেই যেন তার বসবাস। ২০০১ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অভিষেকের বছরই প্রথমবার ইনজুরিতে পড়েন। ছিটকে যান ২০১১ বিশ্বকাপ থেকেও। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন একাডেমি মাঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু পিছিয়ে যাননি।
ওই ঘটনার চার বছর পর ২০১৫ সালে তারই নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে মাশরাফির নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছ বাংলাদেশ। দলকে পথ দেখিয়ে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশকে টানা চারটি সিরিজ জেতান সফলতম এই অধিনায়ক। জিম্বাবুয়ে, ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারান।
২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার পর ১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইনজুরির কবলে পড়ে অনেকটা সময়ই মাঠের বাইরে কাটাতে হয় তাকে। তবুও একজন পেসার হিসেবে তার সাফল্যের পাল্লা কম ভারি নয়। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক তিনি (২৬৫ উইকেট)।
গেল কয়েক বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে যে অবস্থানে পৌঁছেছে , তার অনেকটা অংশ জুড়েই রয়েছে মাশরাফির নেতৃত্ব গুণ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সফল অধিনায়ক ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত মাশরাফি। ওয়ানডেতে তার নেতৃত্বে জয়ের হার সবচেয়ে বেশি। তাকে বলা হয় "ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক"।
ক্রিকেটের বড় শুরু অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে। সেখানেই চোখে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের। তার হাত ধরেই ক্যারিয়ার বদলে যায় মাশরাফির। কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ না খেলেই টেস্ট অভিষেক হওয়া বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার মাশরাফি।
২০০১ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই নেন ৪ উইকেট। একই বছর নভেম্বরে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। ওয়ানডে ও টেস্ট দুই ফরম্যাটেই জিম্বাবুয়ের তারকা ক্রিকেটার গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন মাশরাফির প্রথম শিকার!
![]() |
| সতীর্থদের কাছে তিনি বড় ভাই |
ব্যক্তিগত জীবনে একেবারেই সাদামাটা থাকাটাই পছন্দ তার। দামি পোশাক, ব্র্যান্ড কখনোই প্রলুব্ধ করে না তাকে। ট্রাউজার, টি-শার্ট আর পায়ে স্লিপার- এই হলেন মাঠের বাইরের মাশরাফি। সঙ্গে সানগ্লাসটা থাকে। পাশাপাশি একটা মোটর সাইকেল। বলা যায় এটি তার জীবনেরই একটা অংশ।
বারবার ইনজুরির ছোবলে পড়া এই ডানহাতি পেসার সাদা পোশাকে মাত্র ৩৬টি টেস্ট খেলেছেন। নিয়েছেন ৭৮ উইকেট। ২০৯ টি ওয়ানডে ও ৫৪টি টি-টোয়েন্টি খেলে নেন ২৬৫টি ও ৪২টি উইকেট।
![]() |
| ছেলে সাহেলের সাথে মাশরাফি |






Mashrafi Bin Mortaza is the king of our BD cricket.
ReplyDeleteCaptain Mash 💕💞
ReplyDelete