একাত্তরের দিনগুলি
“একাত্তরের দিনগুলি”- একজন মায়ের ও একটি দেশের দিনলিপি। ডায়েরির পাতায় এ এক দেশপ্রেমের গল্প, আত্মত্যাগের গল্প।
কী আছে এ ডায়েরিতে ? একটা ছোট, সুখী পরিবারের এলোমেলো হয়ে যাবার গল্প। একটা দেশ ও দেশের মানুষকে করা অত্যাচার ও নিপীড়নের গল্প। হাসি আনন্দে মাখা কৈশোরকে ভয়াল বিভীষিকায় মাখিয়ে দেয়ার গল্প। চোখের সামনে প্রিয়জনের মৃত্যু দেখার গল্প। এ গল্প একদল যুবকের... যারা দেশকে ভালবাসার অপরাধে হারিয়ে গেছে চিরতরে...। এ গল্প সাহসিকতার। সবচেয়ে বড় কথা.. এ গল্প এক মায়ের... যে তার নাড়ী ছেঁড়া ধন, তার সন্তানকে কোরবানি করে দিয়েছিল দেশের জন্য। এটা কি তাহলে দেশের গল্প?
![]() |
| একাত্তরের দিনগুলি বইয়ের একটি প্রচ্ছদ |
একটি স্বাধীন দেশ জন্মাতে কি কি লাগে? লড়াকু সৈনিক লাগে, প্রশিক্ষন লাগে, অস্ত্র লাগে, সাহস লাগে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যা লাগে তা হল দেশপ্রেম। একদল পাগল ছেলের কিছুই ছিল না । অস্ত্র না, প্রশিক্ষন না.. ছিল শুধু দেশপ্রেম আর সাহস। আর আত্মবিশ্বাস ছিল কিছু একটা করে দেখানোর। তাইতো মা-বাবার আদর ছেড়ে, পড়াশোনাকে আপাতত মুলতুবি রেখে পাগলের দল ছুটল প্রশিক্ষন নেয়ার জন্য। ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসে হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে যে! প্রশিক্ষন নিতে গেল ইন্ডিয়ার মেলাঘরে, সেখানে তাদের সে কি কষ্ট! খাবার পানির সংকট, খাবারের সংকট, প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র নেই, অস্ত্রের সংকট আরো কত্ত কি অসুবিধা! তার পরেও তারা খুশি, এইতো কদিন পর যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করে ফেলবে। তখন আর কোন কষ্ট থাকবে না।
এই পাগল দলের একজন রুমি। শরিফ ইমাম ও জাহানারা ইমাম দম্পতির বড় সন্তান রুমি । জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিদিনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। ঘটনা লিপিবদ্ধের এই ডায়েরি “একাত্তরের দিনগুলি”। এই ডায়েরি শহীদ জননীর হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনায় ভরপুর নয় মাসের ভয়াল মুহূর্তগুলোর সাক্ষী। শহীদ জননীর চোখে দেখা একাত্তর। দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর ছেলে রুমিকে। দেশ তাঁর ছেলেকে তাঁর বুকে ফিরিয়ে দেয়নি ঠিক কিন্তু রুমি আজও বেঁচে আছে এ দেশের প্রতিটি ছেলের হৃদয়ে ।
![]() |
| গেরিলা যোদ্ধা শহীদ রুমি |
এমন অনেক অনেক আত্ম উৎসর্গের হাত ধরে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা। কত মা যে তাঁর সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন, তার সবটুকু লেখা নেই সেভাবে। কিন্তু আমরা জানি, আমাদের আত্মার অংশ সবুজের বুকের লাল অংশটুকু কত শত বুকের রক্তে লাল হয়েছে। কত লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া সে পতাকা, স্বাধীনতা। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর আশ্চর্য নির্মোহ লেখনী দিয়ে লিখে গেছেন ১৯৭১ এর সেই উত্তাল দিনের ঘটনাচক্র। তাঁর শোক, তাঁর কষ্টের হাহাকারকে শব্দের আড়ালে রেখেই তিনি লিখে গেছেন দিনপুঞ্জীর মত এই অনন্য সাধারণ বইটি, যার নাম "একাত্তরের দিনগুলি"। যে সন্তানকে তিনি দেশ মাতৃকার জন্য উৎসর্গ করেন, তাঁর নাম শহীদ শাফি ইমাম রুমী। কী প্রখর সম্ভাবনাময় এক তরুণ ছিলেন রুমী। যাঁর পড়তে আসবার কথা ছিল ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে। কিন্তু দেশে তখন যুদ্ধের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। স্বার্থপরের মত রুমী পালিয়ে না গিয়ে যুদ্ধে যাবার জন্য তৈরি হন। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস। সে ইতিহাসের ধারাবাহিক এক নিবিড় প্রামান্য দলিল "একাত্তরের দিনগুলি।"




শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ।
ReplyDelete