লালসালু
একটি অচেনা অজানা কবর, একজন ধর্ম ব্যবসায়ি আর একটি লাল কাপড়… । লোকজন বলে “লালসালু”। নিপাট গ্রামীণ সমাজের উপর রচিত উপন্যাস “লালসালু”। রচয়িতা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
উপন্যাসে লেখক এমন এক গ্রামীণ সমাজের চিত্র এঁকেছেন, যেখানে পূর্ব বাংলার কৃষি ভিত্তিক শ্রমনিষ্ঠ, সহজ সরল ধর্মপ্রান মানুষরা বিভ্রান্ত হয় এক কপট ধর্ম ব্যবসায়ি দ্বারা । জীবন সমস্যায় জর্জরিত মজিদ জীবিকা অর্জনের মৌলিক প্রয়োজন থেকেই ধর্ম ব্যবসার পথ বেঁচে নেয়। মহব্বতনগর গ্রামে মজিদ এর প্রবেশ ঘটে নাটকীয় ভাবে, যা তার ধর্ম ব্যবসার পথ সুগম করে দেয়। গ্রামে মিথ্যা পীরনামা বিস্তার করে গ্রামের মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে সে প্রভাব বিস্তার করে, হয়ে ওঠে সম্পদশালি। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজে সুকৌশলে মিথ্যার দ্রুত বিস্তার ঘটায়।
ধর্মকে পুজি করে ও লালসালুতে আবৃত অজানা মোদাচ্ছের পিরের মাজারকে কেন্দ্র করে মজিদের সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এই সাম্রাজ্যের মুল ভিত্তি ছিল সাধারন মানুষের সরলতা ও নিরক্ষরতা। ধর্মকে নিজ স্বার্থ হাসিলে ও কুসংস্কারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মজিদ। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে গ্রামের অলিখিত মাতবর।
জমিলা,রহিমা, খালেক ব্যাপারী, গ্রামের নিরীহ মানুষ এরা যেন বাঘবন্দির খেলায় মজিদের কাছে বন্দি। নিজ স্বার্থ হাসিলে মজিদ তাদের সবাইকেই ঢাল বানায়। ধর্মের আবরণে মজিদ প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার, অর্থ বিত্তের যে স্বপ্ন একদিন সে দেখে, একদা তার সেইসব স্বপ্ন পূরণ হয়। সে সফল হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে একদিন ঠিকি নড়ে ওঠে তার সাম্রাজ্য। এটাই হয়তো সময়ের প্রকৃত বিচার। মজিদ জানেনা এর শেষ কোথায়।
ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারকে পুঁজি করে, ধর্মের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমাজে কালের গতিতে যে কিছু অসাধু লোক বা ধর্ম ব্যবসায়ির উদ্ভব ঘটে, তারই এক খণ্ড প্রতিচ্ছবি “লালসালু”। এমন হাজার হাজার লালসালু আবৃত আছে দেশে। এক টুকরো লালসালু যেন অমিত ক্ষমতার অধিকারী। “লালসালু” উপন্যাসে লেখক মানুষের সীমাহীন দুঃখ, বৈকল্য, কপটতা, ও মিথ্যাকে উন্মোচন করেছেন। এবং সেইসাথে জীবনের প্রত্যয় ও শিল্পবোধের নতুন রুপ ফুটিয়ে তুলেছেন। ভাগ্য অন্বেষণ কারী মজিদের জীবনের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা , প্রাপ্তি ও সংগ্রামের কাহিনী নির্মাণ করতে গিয়ে লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পূর্ব বাংলার গ্রামীণ সমাজের বাস্তবসম্মত ও শৈল্পিক চিত্র অঙ্কন করেছেন।

